সংবাদ » বাংলাদেশ

করোনার প্রণোদনা নিয়ে কক্সবাজারে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে সংলাপ

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী’র উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত কভিট-১৯ প্রণোদনা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে এক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং আই.এল.ও এর সার্বিক সহযোগিতায় ২৬ নভেম্বর কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী’র সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকার সভাপতিত্বে পরিচালিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আই.এল.ও এর কান্ট্রি ডিরেক্টর তমু পুটিয়ানে, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এস.এম.ই শাখার জি.এম হোসনে আরা শিখা, শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব নাইমুল আহসান জুয়েল।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী’র পরিচালক আবিদ আহসান সাগরের সঞ্চালনায় জেলার চল্লিশটি ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের জি.এম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত কভিট-১৯ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় লকডাউন এ ক্ষতিগ্রস্থ জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা এবং পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন।

করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্থ জেলার শ্রমিক কর্মচারীদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রণোদনা বিষয়ক প্রতিটি ব্যাংকে সিটিজেনচাটরসহ হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র মাঝারি এবং নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ করা হয়। প্রণোদনার আওতায় স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের সফলতার জন্য কৃষি ও ইসলামি ব্যাংকে অংশগ্রহণকারিদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।

উপস্থিত ব্যাংক কর্মকর্তাগণ উদ্যোক্তাদের বিষয় ভিত্তিক সঠিক তথ্য এবং দক্ষতা উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রধান এবং বিশেষ অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। চলতি মূলধন হিসেবে এস.এম.ই খাতে বিশ হাজার কোটি টাকা ও পলিসিগত ক্রটি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। ব্যাংক কাস্টমারের সম্পর্কের ভিত্তিতে কোন রকম কোলেটারেল সিকিউরিটি ছাড়া ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।

প্রধান অতিথি কামাল হোসেন বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত এস.এম. ই সাথে সংশ্লিষ্টদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনার পর থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, স্থানীয় উদ্যোক্তা, চেম্বার অফ কমার্স, ব্যাংক এবং বিসিক এর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে যাতে নারী উদ্যোক্তাসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ স্বল্প সুদে ঋণের আওতায় এসে লকডাউনকালে তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন। তিনি আরও বলেন ইতিমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা পর্যায়ে প্রণোদনা মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি ব্যাংকারদের আরও আন্তরিক হওয়ার জন্য আহবান জানান।

আই.এল.ও এর কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে কক্সবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে মৎস্য এবং লবণ শিল্পের সাথে প্রচুর কর্মচারী ও শ্রমিক জড়িত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের দক্ষতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আই.এল.ও সহযোগিতা করে যাবে।

শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব নাইমুল আহসান জুয়েল বলেন লকডাউন সময়কালে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন সেই ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেনি। তিনি প্রধান অতিথি এবং উপস্থিত ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন কিভাবে সহজ শর্তে স্বল্প সুদে শ্রমিকদের ঋণ এবং প্রণোদনার আওতায় আনা যেতে পারে তা বিবেচনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। তিনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন লকডাউন সময়কালে তিনি কক্সবাজারের শ্রমিকদের প্রতি যে মানবিকতা দেখিয়েছেন তা অতুলনীয়।

ডি.জি.এম কৃষি ব্যাংক মোহাম্মদ মহসিন দীর্ঘ আলোচনার বিষয়বস্তু বর্ণনা করেন এবং আগামীতে ব্যাংকারদের নিয়ে এই ধরনের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার আহবান জানান।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী’র সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, সরকারের রূপকল্প ভিশন ২০২১, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়নের লক্ষমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উপনিত হতে গেলে আমাদের প্রয়োজন টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতসহ জনসংখ্যাগত মুনাফাকে সম্পৃক্ত করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারকে ঘিরে যে অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে তা বর্তমানে দৃশ্যমান। এর সুফল ভোগের জন্য কক্সবাজারের সকল স্থরের ব্যবসায়ি মহল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রশাসনকে সমন্বয়ের মাধ্যেমে এক যুগে কাজ করে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন আগামীতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে এইধরনের সচেতনতামূলক সভার পাশাপাশি উদ্যোক্তা এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে সরাসরি সংলাপ করার পরিকল্পনা রয়েছে।