বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
করোনাভাইরাস
সংক্রমণ ও মৃত্যুহার আরও বাড়তে পারে
রাকিব উদ্দিন
বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণে ২৫ নভেম্বর ‘একদিনে’ রেকর্ড ১২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন সারাবিশ্বে নতুন করে ছয় লাখ ১১ হাজার ৬৭২ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী আগামী ১০/১৫ দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, ২৫ নভেম্বর কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুই হাজার ৩০৪ জনের মৃত্যু এবং নতুন করে এক লাখ ৮১ হাজার ১২৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
করোনা মহামারীর প্রায় ১১ মাসের মাথায় বিশ্বে রেকর্ড মৃত্যুর বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চলে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পরেছে। রাশিয়াতেও করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। শীতের প্রকোপ এবং জনসমাগম হয়, এমন দোকানপাট ও পানশালাগুলো পুরোদমে চালু হওয়ায় করোনার প্রকোপ আরও বাড়তে পারে ইউরোপ, এশিয়াসহ অন্য অঞ্চলে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘মহামারী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায় কীরকম হবে আমরা জানি না। তাই সব রকম প্রস্তুতি নিতে হবে, সচেতন হতে হবে। এজন্য যা যা করা দরকার তার সবকিছুর নির্দেশনা দিয়েছি। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, অন্যদের মেনে চলায় সচেতন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারদের ১১৬, ১১৭, ১১৮তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেই বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা মহামারী। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হয়েছে। চীনে করোনার প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হলেও এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী এটি বেশি দেখাচ্ছে। দেশটির গ্রামাঞ্চলে করোনা ছড়িয়ে পরেছে। তাছাড়া শীত এবং ইনডোর অ্যাকটিভিটিস অর্থাৎ পানশালা, ইনহাউজ প্রোগ্রাম বা হাউজ পার্টিসহ এ জাতীয় কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও রাশিয়ায় সংক্রমণ বাড়ছে। আগামী ১০/১৫ দিন ওইসব দেশে করোনার প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।’
শীতে বাংলাদেশে সংক্রমণ বাড়তে পারে কী না জানতে চাইলে ডা. এসএম আলমগীর বলেন, ‘এখানে কিছুটা বাড়তে পারে। বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সের যারাই করোনা আক্রান্ত হোক না কেন, তাদের খুব দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কারণ এই বয়সের লোকজন এমনতিইে এজমা, ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্র ও শাসকষ্টজনিত নানা রোগে আক্রান্ত থাকেন। শীত মৌসুমে এই বয়সের লোকজন করোনা আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেশি থাকে।’ তিনি করোনা প্রতিরোধে সবাইকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিসংখ্যান সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’র বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ এক কোটি ৩১ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই দেশটিতে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মোট দুই লাখ ৬৮ হাজার ২৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম করোনা শনাক্ত হলেও এরপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে মে মাসে সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখী হলে জুনে তা বাড়তে থাকে, এরপর সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমলেও আগস্টে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়। নভেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে করোনার প্রাদুর্ভাব।
যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতে সবচেয়ে বেশি করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। ভারতে মোট ৯২ লাখ ৬৬ হাজার ৭০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনায় দেশটিতে মোট এক লাখ ৩৫ হাজার ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে রাশিয়ায়ও বর্তমানে করোনার সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব ঘটছে। ২৫ নভেম্বর দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ ৫০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন দেশটিতে নতুন করে ২৩ হাজার ৬৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ সর্ম্পকে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘শীতের কারণে যেমন বাড়ছে, তেমনি বিভিন্ন দেশ লকডাউন ও এ জাতীয় প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম শিথিল করায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। আবার ভাইরাসটির ‘ন্যাচার’ (গতি-প্রকৃতি) পরিবর্তন বা কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে-এমন হয়ে থাকতে পারে। তবে যেসব দেশ ব্যাপকভিত্তিক ট্রেসিং (রোগী শনাক্ত করা) এবং কঠোরভাবে লকডাউন, স্যোশাল ডিসট্যান্স, আইসোলেশন কার্যকর করতে পেরেছে সেসব দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
চীনে করোনার প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হলেও দেশটির সরকার কঠোরভাবে ‘লকডাউন’ (অবরুদ্ধ) কার্যকর করে খুব দক্ষতার সঙ্গেই মহামারী নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। দেশটিতে সংক্রমণ চূড়ায় (পিকে) ওঠে গত ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে। এরপর মার্চের প্রথমদিকেই সংক্রমণ নিম্নমুখী হয়। এরপর থেকে চীনে করোনা সংক্রমণ বেশ নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চীনে মোট ৮১ হাজার ৫৫০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, আর দেশটিতে করোনায় মোট চার হাজার ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনার প্রাদুর্ভাব।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইউরোপের দেশগুলো দুই-আড়াই মাসের মধ্যে সংক্রমণের প্রথম ঢেউ সামলাতে সক্ষম হলেও দুই-তিন মাস পর ওইসব দেশে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। আবার ইউরোপের দেশগুলোতে প্রথম ঢেউ শেষ হওয়ার পরপর লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও পেরুসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপে দেশগুলোতে সম্প্রতি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এবং রাশিয়ায় এখনও প্রথম ঢেউই শেষ হয়নি।
প্রথম পর্যায়ে বিশ্বব্যাপী গত ১৭ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ৮১ হাজার ৯৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে ওইদিন সারাবিশ্বে সর্বোচ্চ মোট আট হাজার ৫৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর জুলাইয়ের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ৩১ জুলাই সারাবিশ্বে মোট দুই লাখ ৯৩ হাজার ২৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং ছয় হাজার ৪৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর কিছুদিন সংক্রমণের গতি কমেছিল, পরবর্তীতে পুনরায় তা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে গত ২০ নভেম্বর একদিনে বিশ্বে সর্বোচ্চ ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৬০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সংবাদ অনলাইন ডেস্ক
সংবাদ অনলাইন ডেস্ক
সংবাদ অনলাইন ডেস্ক
সংবাদ অনলাইন ডেস্ক
উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ায় সহিংস বিক্ষোভের করায় ছয় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে
অক্সফোর্ডের করোনাভাইরাস টিকার প্রতি ডোজ চার ডলার মূল্যে বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে ভারতের