বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
বাসস
সরকার বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয় চলার মতো দক্ষ সরকারি কর্মচারী গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেধা, জ্ঞান, বুদ্ধি এবং মননকে দেশের কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দেশটাকে উন্নত করার জন্য আমরা উপযুক্ত কর্মচারী গড়ে তুলতে চাই, মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়। প্রশাসনের সেবা পায়। নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ার সুযোগ পায়।’
সরকারে আসার পর আওয়ামী লীগ প্রশাসনের কর্মচারীদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দেশটাকে উন্নত করার জন্য আমরা উপযুক্ত কর্মচারী গড়ে তুলতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) ১১৬, ১১৭ ও ১১৮তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী এবং সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শাহবাগস্থ বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না বা তাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণের উদ্ধৃতি দেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় এ গরিব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’
শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শিখেছি, রিকশাওয়ালাকে আপনি বলে সম্বোধন করেছি। কারণ, আমাদের বাবা-মা সেটাই শিখিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে এই সমাজের প্রতি। প্রত্যেকের অবদান রয়েছে দেশের প্রতি। সে কথাটা মনে রাখতে হবে। তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা।’
সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘সমাজে যেসব উপসর্গ মাঝে মাঝে দেখা দেয়, যেমন-নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এসবের বিরুদ্ধেও আপনাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে কারো মুখ চেয়ে নয়, যারাই অপরাধী, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখবেন, এটাই আমার কথা।’
তিনি যোগ করেন, ‘অপরাধী যে দলের হোক বা যে কেউ হোন না কেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। সেটাই আপনারা করবেন, আমরা চাই।’
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন স্বাগত বক্তৃতা করেন। একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা কোর্সের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন।
এ বছরের ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া ৫ মাসব্যাপী এবারের কোর্স করোনা বিভ্রাটে পড়ে বিলম্বিত হয় এবং অনলাইন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। ১১৬ জন অংশগ্রহণকারীর সবাই কৃতকার্য হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭০ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী তিন জন শিক্ষার্থীর হাতে রেক্টর’স পদক তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী সনদপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এই করোনাকালীন অবস্থার মধ্যেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন। কাজেই আপনাদের এই অর্জিত জ্ঞান আপনারা দেশের কাজে অবশ্যই লাগাবেন। কেননা দেশটাকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেটা মনে রাখতে হবে।’
‘করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোর্স সম্পন্ন করতে পারায় শিক্ষার্থীরা অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন একটি অস্বাভাবিক অবস্থায়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি আপনারা যেমন মেনে চলবেন, আপনার সহকর্মী এবং দেশবাসী যেন মেনে চলে এবং আপনার কর্মস্থলে যেন সবাই মেনে চলে এই বিষয়ে আপনাদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের জীবন এবং বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে, অনেককে আমরা হারিয়েছি। তাই এটা যেন আর বিস্তার লাভ করতে না পারে সেজন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আপনারা চলবেন। কারণ দ্বিতীয় পর্যায়ের যে ঢেউটা আসছে সেটা কেমন হবে আমরা জানি না।
‘অনেক দেশ পুনরায় লকডাউনে চলে গেছে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও সহনশীল অবস্থায় আছি। কিন্তু খুব সাবধানে চলতে হবে। ভ্যাকসিনের জন্য আমরা বুকিং দিয়ে রেখেছি যখনই শুরু হবে তখনই বাংলাদেশ আনতে পারবে।’
করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণে তিনি সরকারের সব পর্যায়ে ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘ভ্যাকসিন সংগ্রহ, রাখা এবং এর প্রয়োগ করার পর কী কী করতে হবে এ ব্যাপারে সব রকমের নির্দেশনা আমার দেয়া আছে। সেটা মেনেই আমাদের এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে।’
করোনার মধ্যেও সরকার গৃহীত প্রকল্পগুলো যেমন নিয়ম মতো এবং মানসম্পন্ন হয় সে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখার জন্য তিনি সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।
তিনি নবীন কর্মকর্তাদের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করে বলেন, ‘আপনারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষকে ভালোবেসে কাজ করবেন। এই মনোভাব নিয়েই আপনাদের কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে সাফল্য অর্জন করুন।’
তার সরকার যে দেশের উন্নয়ন করতে পারে সেটা প্রমাণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে সরকারে থাকায় আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগের ওপরে অর্জনের যে লক্ষ্য নিয়েছিলাম, তা পূরণ করতে সক্ষম হলেও করোনার কারণে আমরা পিছিয়ে গিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি যেখানে ঋণাত্মক ধারায় চলে গিয়েছে সেখানে আমরা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি।’
তিনি করোনা মোকাবিলায় তার সরকারের দেয়া প্রণোদনা, নগদ অর্থ সাহায্য এবং মানুষের দ্বারে খাবার পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টার উল্লেখ করে বলেন, ‘মানুষের জীবনযাত্রা যাতে সচল থাকে এজন্য করোনার মধ্যেও আমরা যথাযথ প্রচেষ্টা চালিয়েছি।’
যশোর অফিস
সংবাদ অনলাইন ডেস্ক
সংবাদ অনলাইন ডেস্ক
সংবাদ অনলাইন ডেস্ক
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।