মতামত » সম্পাদকীয়

মানতে হবে বিল্ডিং কোড

কেরানীগঞ্জের চড়াইল এলাকায় ডোবার উপর নির্মিত একটি তিনতলা ভবন হেলে পড়েছে। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আকস্মিক বাড়িটি পুরোপুরি হেলে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে হেলে পড়া ভবনের বাসিন্দাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওই বাড়ির ৫ জন আহত হলেও নিহত হওয়া বা নিখোঁজ থাকার খবর মেলেনি।

কেরানীগঞ্জে ভবন হেলে পড়ার খবরটি উদ্বেগজনক। তবে এমন খবর নতুন নয়। সাম্প্রতিককালে দেশে এভাবে ভবন হেলে পড়া বা ভেঙে পড়ার ঘটনা অনেক বেড়েছে। গত কয়েক বছরে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ভবন হেলে পড়ার খবর পত্রিকায় এসেছে। প্রশ্ন হলো, এভাবে ভবনগুলো হেলে পড়ছে কেন? এ যাবৎ দেশে যত ভবন ধস কিংবা হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর কোনটিই সঠিক পন্থায় নির্মিত হয়নি বলে আমরা জেনেছি। সর্বশেষ কেরানীগঞ্জে ডোবার উপর উপড়ে পড়া ভবনটি নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টিও স্পষ্ট।

গোটা দেশেই ডোবা-নালা, পুকুর ভরাট করে অসংখ্য বহুতল ভবন বানানো হচ্ছে। একতলা ভবনের ভিতের উপর তিনতলা, চারতলা বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে অহরহ। এসব ভবন কতটা নিরাপদ এবং বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হচ্ছে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ বাড়িই নির্মাণের আগে মাটি পরীক্ষা কিংবা পাইলিং করা হয়নি। দুঃখজনক হলো, স্থানীয় প্রশাসনও এ বিষয়ে নজর দেয়নি।

বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিনা, তা কঠোরভাবে তদারকি করা দরকার। এক্ষেত্রে দেশে যেসব নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), অন্যান্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনগুলোর ভূমিকা ঠিকমতো না হলে জটিলতা বাড়বে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে চলা এবং সেটা মেনেই ভবন নির্মাণ করা। বিল্ডিং কোডের মূল ব্যাপারটি হচ্ছে জীবনের নিরাপত্তা। নরম মাটির ওপর ভবন নির্মাণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সাধারণ জনগণকে ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। জনসচেতনতার পাশাপাশি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যারা কাজ করেন, তাদের সচেতন হতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সব খাতের প্রকৌশলীদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।